প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
কর্ণাটকের মুসলিম তরুণী যদি ইসলামকে রক্ষায় এরকম সাহসিকতা দেখাতে পারে, তাহলে মুসলিম শাসক এবং সেনাবাহিনী সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কেন ইসলাম এবং মুসলিমদের রক্ষার দায়িত্ব পালন করে না?
ভারতের কর্ণাটকে হিজাব নিষিদ্ধের প্রতিবাদে হিযবুত তাহ্রীর/উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ, আজ শুক্রবার (১১/০২/২২) বাদ জুম‘আ ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন মসজিদ প্রাঙ্গণে জুম‘আ বয়ানের (রাজনৈতিক সমাবেশ ও বক্তৃতা) আয়োজন করে; যার শিরোনাম ছিল: “কর্ণাটকের মুসলিম তরুণী যদি ইসলামকে রক্ষায় এরকম সাহসিকতা দেখাতে পারে, তাহলে মুসলিম শাসক এবং সেনাবাহিনী সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কেন ইসলাম এবং মুসলিমদের রক্ষার দায়িত্ব পালন করে না?” সমাবশে বক্তাগণ শুরুতেই আন্তর্জাতিক ও সকল দেশি মিডিয়াতে আলোচিত মুসলিম তরুণীর সাহসী পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন, ভারতের কর্ণাটকে আমাদের মুসলিম বোন মুসকান-এর বীরত্ব এখন সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। যখন ভারতের কর্ণাটকের স্থানীয় সরকার মুসলিম বোনদের হিজাব পরিধানে নিষেধাজ্ঞা আনতে চাচ্ছে এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সমর্থকেরা মুসলিম বোনদের হিজাব পরে কলেজে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে, তখন সেই বোন ভয়-ভীতিকে তোয়াক্কা না করে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের মিছিলের সামনে “আল্লাহু আকবর” বলে শ্লোগান দিচ্ছিল। সেই বোন আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে নিজের ভেতর আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করছিল, আল্লাহ্’র সাহায্য কামনা করছিল। বোনটি বলছিল, “আমার হিজাবের অধিকার ছিনিয়ে নেয়ার অধিকার কার আছে?” শুধুমাত্র একটি বোনের সাহস ও বীরত্ব যেন পুরো মুসলিম উম্মাহ্’র হৃদয়ে স্পন্দন ও তাকওয়ার সঞ্চার করেছে।
মুসলিমদের উদ্দেশ্য করে বক্তাগণ বলেন: এই বোনটির বীরত্ব আমাদেরকে শেখায় কিভাবে ইসলামের জন্য দাঁড়াতে হয়। যখন ভারতজুড়ে বহু বছর ধরে ইসলাম-ভীতির চর্চা হচ্ছে, মুসলিমদের উপর জুলুম-নিপীড়ন চলছে, এবং বাংলাদেশসহ আশেপাশের মুসলিম শাসকেরা নিশ্চুপ, ঠিক সেই সময় এই বোন শেখালো কিভাবে আল্লাহ্’র হুকুমের জন্য সাহসের সাথে দাঁড়াতে হয়! সে আমাদের শেখালো ইসলামের শত্রুদের সামনে কিভাবে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা-কে মহিমান্বিত করতে হয়! স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জেগেছে, যদি সাধারণ একজন মুসলিম তরুণী ইসলামকে রক্ষায় এরকম সাহসিকতা দেখাতে পারে, তবে বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ মুসলিমদেশগুলোর শাসকেরা শক্তিশালী সেনাবাহিনী ও অত্যাধুনিক সামরিক শক্তির অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেন ইসলাম ও মুসলিমদের রক্ষায় দায়িত্ব পালন করে না? কাশ্মির-আসামসহ ভারতজুড়ে মুসলিমদের উপর নির্যাতনকে বাংলাদেশ সরকার কেন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে আখ্যা দেয়? এমনকি নিজ দেশের মধ্যে সীমান্তবর্তী মুসলিমদের হত্যাকেও বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী কেন ভারতীয় বাহিনী আত্মরক্ষায় গুলিবর্ষণ করে বলে আখ্যা দেয়? নিশ্চয়ই আপনারা অনুধাবন করছেন, এই শাসকদের নিশ্চুপ থাকার কারণ এরা দালাল ও মেরুদন্ডহীন– এরা মুসলিম উম্মাহ্’র স্বার্থ সংরক্ষণে কখনই কাজ করে না, এই শাসকদের উত্থান ঘটানোই হয়েছে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী কাফির ও তাদের আঞ্চলিক দোসর ভারতের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য; ইসলাম এবং মুসলিমদের স্বার্থ কখনই তাদের বিবেচনায় ছিল না এবং নেই। মুসলিমরা যেমন তাদের সমস্ত কাজকে আল্লাহ্’র সন্তুষ্টির সাথে যুক্ত করে, এই শাসকেরা তাদের সমস্ত কাজকে তাদের পশ্চিমা প্রভুদের সন্তুষ্টির সাথে যুক্ত করে।
বাংলাদেশের হাসিনা সরকার হিন্দুত্ববাদীদের একের পর এক যুলম-নিপীড়নে চুপ থাকলেও, আল্লাহ্ ও মুসলিম উম্মাহ্’র শত্রু মুশরিক রাষ্ট্র ভারতের সাথে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে খুবই সরব থাকে। প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে গুজরাটের কসাই, মুসলিম গণহত্যাকারী মোদিকে বলেছিল, “ভারতের সাথে আরও ৫০ বছর এবং তারও বেশী সময় ধরে কাজ করতে বাংলাদেশ আগ্রহী”। উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা যখন আল্লাহ্’র হুকুম, মুসলিম নারীদের সম্মান নিয়ে এই তামাশা করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে, তখন বাংলাদেশের দালাল সরকার ইসলামবিদ্বেষী ভারত রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা আদান-প্রদানে ব্যস্ত রয়েছে।
হে মুসলিম ভাইয়েরা! যে শাসকদের কোন মেরুদণ্ড নাই, যারা রুয়াইবিদাহ্ (অজ্ঞ ও নির্বোধ) তাদের অধীনে আমরা এবং আমাদের দ্বীন নিরাপদ না। আমাদের প্রয়োজন খলিফা মুহ্তাসিম বিল্লাহ্’র মত শাসক যিনি রোমান সৈন্য কর্তৃক একজন নির্যাতিতা মুসলিম নারীর সাহায্যের আহ্বানে শুধু সেনাবাহিনীই প্রেরণ করেননি, আমুরিয়াকে (বর্তমান তুরস্কের আনাতোলিয়া অঞ্চল) দখল করে সেখানে বসবাসরত মুসলিমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলেন। অভিভাবকহীন মুসলিমরা খিলাফত রাষ্ট্রের অনুপস্থিতিতে কখনোই প্রকৃত নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও সুরক্ষা লাভ করতে পারবে না, “ইমাম (খলিফা) হচ্ছেন ঢালস্বরূপ, যার পেছনে মুসলিমরা যুদ্ধ করে এবং নিজেদেরকে রক্ষা করে” (সহীহ মুসলিম)। খিলাফত রাষ্ট্র অতীতে যতই দুর্বল কিংবা সমস্যায় জর্জরিত থাকুক না কেন, মুসলিম উম্মাহ্’র বিশেষ করে নারীদের সম্মান রক্ষায় কখনোই আপোষ করেনি, শত্রুদের ভালবাসা দেখানো দূরে থাক।
পরিশেষে বক্তাগণ নিষ্ঠাবান সেনাঅফিসারদের আহ্বান করে বলেন: আমরা আপনাদেরও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, প্রকৃত সাহস ও সম্মান রয়েছে আল্লাহ্’কে মহিমান্বিত করার মধ্যে; বোন মুসকান-এর মতো কাফির-মুশরিক শত্রুদের ভয়ভীতির সামনে “আল্লাহু আকবর” বলার মধ্যে। আপনাদের শিক্ষা নিতে হবে এই বোন থেকে যার নাই কোন বাহিনী, ছিল না আপনাদের মতো সামরিক হাতিয়ার; কিন্তু সে আল্লাহ্’র উপর তাওয়াক্কুল (ভরসা) করে মুশরিকদের আগ্রাসনের মুখে ইসলামকে রক্ষার জন্য সাহসের সাথে একাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এই উম্মাহ্’র ঘরে ঘরে এরকম অসংখ্য সাহসী মুসলিম রয়েছে যারা আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে – কখন আপনারা ইসলামকে রক্ষার জন্য অগ্রগামী হবেন? কখন মুসলিমদের একমাত্র ঢাল খিলাফত ফিরিয়ে আনবেন? কখন খিলাফতের সামরিকবাহিনী হয়ে ভারত, আরাকান, ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের নির্যাতিত মুসলিমদের রক্ষায় আপনারাও জিহাদের ময়দানে “আল্লাহু আকবর” ধ্বনি দিবেন? এবং তারাও আপনাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইসলামকে রক্ষার জন্য দাঁড়াবে।
আপনারা এই দালাল শাসকগোষ্ঠী থেকে এই মুহূর্তেই আপনাদের সমর্থনকে সরিয়ে ফেলুন এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠায় অতিসত্ত্বর হিযবুত তাহ্রীর-কে নুসরাহ্ (সামরিক সহায়তা) প্রদান করুন। আল্লাহ্’র রাসূল ﷺ-এর ওয়াদা খিলাফত রাষ্ট্রকে ফিরিয়ে এনে মুসলিমদের সম্মান রক্ষায় আপনাদের ঈমানী দায়িত্ব পালন করুন। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
*يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ وَأَنَّهُ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ*
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের সেই আহ্বানে সাড়া দাও যখন তোমাদের এমনকিছুর দিকে আহ্বান করা হয় যা তোমাদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করে। (সূরা আল-আনফাল: ২৪)
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া কার্যালয়