প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
ইসলামের স্বঘোষিত শত্রু ফ্রান্সের কাছ থেকে বিমান ও স্যাটেলাইট ক্রয় করার চুক্তি করে হাসিনা সরকার কেবল জনগণের অর্থই অপচয় করছে না, বরং মুসলিমদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে
দেশে ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতির জন্য জনগণকে যখন চরম মূল্য দিতে হচ্ছে- হাসপাতালে বেডের নজিরবিহীন ঘাটতি, অপর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম, এমনকি সাধারণ স্যালাইনেরও অভাব, ঠিক তখন সরকার দুটি নতুন লুটপাটের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ফরাসি কোম্পানি এয়ারবাস-এর কাছ থেকে ১০টি A350 এয়ারক্রাফট এবং বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট কেনার ঘোষণা দিয়েছে। শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর ১১ই সেপ্টেম্বর, সোমবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ফরাসি মহাকাশ শিল্পের উপর আস্থা রাখার জন্য এবং তাদের কাছ থেকে বিমান ও স্যাটেলাইট কেনার প্রতিশ্রুতি দেয়ার জন্য হাসিনা সরকারকে ধন্যবাদ জানায়। এই বিমান ও স্যাটেলাইট প্রকল্প ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে দেশের জনগণের সাথে চরম উপহাস। তারা জনগণের জন্য মৌলিক স্বাস্থ্য সেবা অবকাঠামো নিশ্চিত করার বিষয়ে উদাসীন, অথচ নতুন ঋণের মাধ্যমে জনগণের উপর আরও বোঝা চাপাতে বদ্ধপরিকর। এর আগে হাসিনা সরকার জনগণের ৩০০০ কোটি টাকা ব্যয় করে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে, কিন্তু এই প্রকল্প থেকে বাংলাদেশ কত টাকা আয় করেছে তা নিয়ে জনগণ এখনও অন্ধকারে রয়েছে, তবে তারা দেখছে তাদের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে (বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: প্রথমটি যেহেতু অলাভজনক, সেহেতু দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের প্রয়োজন কি? বিবিসি বাংলা, ৩রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২)।
ইতিমধ্যেই বিদেশী ঋণ নির্ভর মেগা লুটপাট প্রকল্পসমূহ (১০,০০০ কোটি মার্কিন ডলার) দেশকে ঋণের সাগরে নিমজ্জিত করেছে। লুটপাটের উন্মত্ততায় মত্ত হাসিনা সরকার এরকম অবস্থার পরও উপনিবেশবাদী ক্রুসেডার ফ্রান্সের সাথে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যার রয়েছে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে শত্রুতার দীর্ঘ ইতিহাস। ফ্রান্স ১৮৩০ সালে মুসলিম ভূমি আলজেরিয়া দখল করে নেয় এবং নির্দয়ভাবে মুসলিমদের উপর নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। ১৯২৪ সালে উসমানীয় খিলাফত ধ্বংস করার কাজে ফ্রান্স ব্রিটেনের সাথে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তখন থেকেই ফ্রান্স ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও ক্ষোভ ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে সাংস্কৃতিক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে এবং তাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ‘চরমপন্থী ইসলাম’ মোকাবিলার নামে পবিত্র কুর‘আন-এর অবমাননা করে, আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে অবমাননা করতে ফ্রান্সের সরকারি ভবনে জঘন্য চার্লি হেবদো কার্টুন প্রদর্শন করে, রাস্তায় নামাজ নিষিদ্ধ করে, ফ্রান্স জুড়ে অসংখ্য ইসলামী বেসরকারি স্কুল ও শতাধিক মসজিদ বন্ধ করে ফ্রান্স সরকার নিরলসভাবে ইসলামফোবিয়া জাগিয়ে তুলছে! ২০১১ সালে ফ্রান্স প্রকাশ্য স্থানে বোরকা ও হিযাব সহ নেকাব পরা নিষিদ্ধ করে। এবং, প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বে দেশটি ইসলামের বিরুদ্ধে ক্রুসেডে আগের চেয়ে বেশি আগ্রাসী ভূমিকা পালন করছে। ম্যাক্রোঁ ইতিপূর্বে বলেছে, ‘ইসলাম সারা বিশ্বে সংকটে রয়েছে’, এবং খোলাখুলিভাবে সে ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই করার ওয়াদা করেছে এবং জনগণকেও তাতে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। এই আগ্রাসনের ধারাবাহিকতায় চলতি মাসেই তার সরকার ফরাসি স্কুলগুলোতে মুসলিম মেয়েদের হিযাব পরাকে নিষিদ্ধ করে।
হে মুসলিমগণ, ঐতিহাসিকভাবে ফ্রান্স মুসলিম হত্যাকারী ঔপনিবেশিক ঘাতক ও মুসলিম ভূ-খন্ডসমূহের হানাদার। এবং, মুসলিমদের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের অবিরাম ক্রুসেডের নেতৃত্ব দিচ্ছে বর্তমান ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ, যে হচ্ছে আল্লাহ্ ও মুসলিমদের স্বঘোষিত শত্রু। সুতরাং, ফ্রান্সের সাথে মুসলিম দেশের সম্পর্ক অবশ্যই যুদ্ধের সম্পর্ক হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা, যার আনুগত্য (আল ওয়ালা) আল্লাহ্ আজ্জা ওয়া জ্বাল-এর প্রতি নয় বরং কাফির-উপনিবেশবাদীদের প্রতি, আল্লাহ্’র এই শত্রুর জন্য কেবল লাল গালিচা বিছানোই নয়, বরং ফ্রান্সের স্বার্থ পূরণে উম্মাহ্’র বিপুল পরিমাণ অর্থও অপচয় করতে যাচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষ এই পুতুল শাসকেরা হচ্ছে যালিম, যারা আল্লাহ্’র আদেশের প্রতি কর্ণপাত করে না:
*إِنَّمَا يَنْهَاكُمْ اللَّهُ عَنْ الَّذِينَ قَاتَلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَأَخْرَجُوكُمْ مِنْ دِيَارِكُمْ وَظَاهَرُوا عَلَى إِخْرَاجِكُمْ أَنْ تَوَلَّوْهُمْ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الظَّالِمُونَ* “আল্লাহ্ তোমাদেরকে কেবল তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন যারা তোমাদের সঙ্গে দ্বীনের ব্যাপারে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছে আর তোমাদেরকে বের করে দেয়ার ব্যাপারে সাহায্য করেছে। যারা তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে তারাই যালিম।” [সূরা আল-মুমতাহিনা: ৯]
হে মুসলিমগণ, এই ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগণ হল রক্ত চোষা জোঁক, যারা পশ্চিমা উপনিবেশবাদী বিশ্বব্যবস্থার গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে। তারা নিজ দেশের জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে তাদের ইসলাম বিদ্বেষী পশ্চিমা প্রভুদের স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্যই ক্ষমতায় বিদ্যমান থাকে। তারা আমাদের সম্পদ লুট করে এবং তাদের পশ্চিমা প্রভুদের সন্তুষ্ট করতে বিমান ও স্যাটেলাইট কেনার মতো অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে জনগণের অর্থ অপচয় করে। এই হচ্ছে তাদের রাজনীতি, যা লোভ, বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণার গভীরে প্রোথিত। তারা জানে যে, তারা জনগণের কাছে নয়, বরং কাফির পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের কাছে দায়বদ্ধ। সুতরাং, আল্লাহ্ ও মু’মিনদের শত্রুর মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় যেতে চায় এবং তা ধরে রাখতে চায়। সুতরাং, আপনাদেরকে অবশ্যই ইসলামের প্রকৃত অভিভাবক তথা নবুয়্যতের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফতে রাশিদাহ্ ফিরিয়ে আনার জন্য সচেষ্ট হতে হবে; এবং এই বিশ্বাসঘাতক পশ্চিমা-সমর্থিত শাসকদেরকে ধিক্কার জানাতে হবে, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র পক্ষ থেকে শেষ বিচারের দিনে অসীম লজ্জা ও অন্ধকারের নিশ্চয়তা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি চুক্তি ভঙ্গ করবে তার পিছনে কিয়ামতের দিন একটি পতাকা থাকবে। এটি তার চুক্তি লঙ্ঘনের মাত্রা অনুযায়ী উত্তোলিত (উচ্চতর) হবে। দেখবে! যে শাসক মুসলিম জনগণের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করবে তার চেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতক আর কেউ হবে না” (মুসলিম)
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া কার্যালয়