আই.এম.এফ-এর সাথে যোগসাজশে সরকার কর্তৃক জ্বালানী তেলের নজিরবিহীন ও নির্দয় মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে হিযবুত তাহ্‌রীর -এর বিক্ষোভ সমাবেশ

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

بسم الله الرحمن الرحيم

আই.এম.এফ-এর সাথে যোগসাজশে সরকার কর্তৃক জ্বালানী তেলের নজিরবিহীন ও নির্দয় মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে হিযবুত তাহ্‌রীর -এর বিক্ষোভ সমাবেশ

জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ শুক্রবার (১১ আগস্ট, ২০২২) বাদ জুম‘আ হিযবুত তাহ্‌রীর/উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন মসজিদ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে, যার শিরোনাম ছিল: আই.এম.এফএর সাথে যোগসাজশে সরকার নির্দয়ভাবে জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি করেছে; খিলাফতের অধীনেই পশ্চিমা কাফিরদের অর্থনৈতিক আধিপত্য থেকে আমাদের মুক্তি সম্ভব। সমাবেশে বক্তাগণ আলোকপাত করেন, কিভাবে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মত পশ্চিমা কাফিরদের প্রতিষ্ঠানগুলো মুসলিম বিশ্বসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে ঋণের ফাঁদে ফেলে দেশের অর্থনীতির ভিতকে ধ্বংস করে পুরোপুরি বিদেশনির্ভর করে এবং দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের জন্য সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার সুযোগ করে দেয়। বক্তাগণ তথ্য-উপাত্ত দ্বারা উন্মোচিত করেন যে শুরুতেই সরকার আইএমএফ-এর এই চক্রান্তের বিষয়টিকে আড়ালে রাখতে আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যবৃদ্ধি, লোকসান কিংবা ভারতে তেল পাচার, ইত্যাদি দোহাই দিয়ে যেসব মিথ্যাচার ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে।

অতঃপর বক্তাগণ আই.এম.এফ-এর স্বরূপ উন্মোচন করে বলেন: এটা সর্বজনবিদিত যে, আই.এম.এফ নামক এই কুখ্যাত পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠান সর্বদাই উপনিবেশবাদী শক্তিসমূহের স্বার্থ এবং সবকিছুকে বেসরকারীকরণ করার পুঁজিবাদী নীতি চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ নিয়ে দেশের অর্থনীতিকে, বিশেষ করে জ্বালানি খাতকে পঙ্গু করে দেয়। আই.এম.এফ-এর নীতি অনুসরণ করে এদেশের কোন ধর্মনিরপেক্ষ সরকারই রাষ্ট্রীয় জ্বালানি ব্যবস্থাপনার অধীনে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)-এ পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করেনি, বরং উৎপাদন বন্টন চুক্তির (পি.এস.সি) অধীনে শেভরন, কনোকোফিলিপস্, ইত্যাদির মতো বিদেশী ঔপনিবেশিক কোম্পানিগুলোকে তেল-গ্যাসসহ আমাদের খনিজ সম্পদ লুট করার সুযোগ করে দিয়েছে। তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতকে মুনাফালোভী বিদেশী কোম্পানি (যেমন: মার্কিন কোম্পানির মালিকানাধীনপল্লী বিদ্যুৎ) এবং দেশীয় পুঁজিপতিদের মালিকানাধীন কোম্পানিসমূহের (যেমন: সামিট গ্রুপ) হাতে তুলে দিয়েছে। অতীতে উপনিবেশবাদী শক্তিসমূহ প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ লুটপাটের উদ্দেশ্যে সমৃদ্ধ ভূ-খন্ডে আক্রমণ করত। কিন্তু, আজকের তথাকথিত ‘মুক্ত বিশ্বে’আই.এম.এফ ও বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানসমূহ দালাল শাসকদের সাথে একজোট হয়ে দেশের সম্পদ লুট করে এবং জ্বালানি সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করে দেয়, যাতে জনগণ পাকাপোক্তভাবে পশ্চিমাদের করুণার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তাই আমরা প্রত্যক্ষ করছি, আই.এম.এফ-এর অশুভ বেসরকারীকরণ কার্যক্রমের মাধ্যমে পশ্চিমা মদদপুষ্ট দুর্নীতিবাজ শাসকগোষ্ঠী ও তাদের সহযোগী কতিপয় পুঁজিপতি জ্বালানি খাত হতে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছে, আর সাধারণ জনগণকে জ্বালানির ক্রমবর্ধমান মূল্যের উত্তাপ সহ্য করতে হচ্ছে। সুতরাং, এই কতিপয় পুঁজিপতিদেরকে দেয়া ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’প্রদান বন্ধ করতে আই.এম.এফ কখনোই সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করে না, বরং এটি তথাকথিত জ্বালানি ভর্তুকি প্রত্যাহারে সরকারকে বাধ্য করে জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তোলে। এগুলো থেকে মুসলিম হিসেবে আমাদের এই শিক্ষা লাভ করা উচিত যে, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধি কখনও আই.এম.এফ বা কোন পুঁজিবাদী বা মানবসৃষ্ট ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে অর্জন করা যায় না, যেমনটি আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা পবিত্র কুর‘আন-এ আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন:

 

* مَثَلُ الَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِ اللَّهِ أَوْلِيَاءَ كَمَثَلِ الْعَنكَبُوتِ اتَّخَذَتْ بَيْتًا وَإِنَّ أَوْهَنَ الْبُيُوتِ لَبَيْتُ الْعَنْكَبُوتِ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ*

“যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেছে তাদের দৃষ্টান্ত হল মাকড়সার মত। সে ঘর বানায়, আর ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই সবচেয়ে দুর্বল; যদি তারা জানত!” (সূরা আনকাবুত: ৪১)

পরিশেষে বক্তাগণ বলেন: হে দেশবাসী, আপনাদের অবশ্যই নবুয়্যতের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফত রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাতে হবে, কেননা শুধুমাত্র খিলাফতই মানুষকে এই দুর্দশা থেকে মুক্তি দিতে পারে। খিলাফত রাষ্ট্রে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দেয়ার প্রয়োজন হবে না, কারণ ইসলামের অধীনে জ্বালানি ও খনিজসমূহ ‘গণমালিকানাধীন সম্পদ’ বিভাগের অন্তর্গত; মানুষ স্বল্প খরচে বা বিনামূল্যে এগুলো ব্যবহার করতে পারবে। শারীআহ্ নির্দেশনা অনুযায়ী তার অর্থনীতিকে সংগঠিত করবে, এবং উপনিবেশবাদী বা তাদের বিভিন্ন সংস্থা যেমন আই.এম.এফ বা বিশ্বব্যাংক-কে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে দেবে না। খলিফা কখনোই বেইলআউটের জন্য এসব সাম্রাজ্যবাদী সংস্থাসমূহের কাছে ধরণা দেবে না, কারণ খিলাফত কখনোই ডলারভিত্তিক কাগুজে মুদ্রা ব্যবস্থাকে অনুমোদন করবে না এবং স্বর্ণ ও রৌপ্যভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থা চালু করা হবে। তাই খিলাফত রাষ্ট্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হঠাৎ করে বাড়বে না, কিংবা মূল্যস্ফীতি হবে না। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আমাদেরকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে, ঋণে জর্জরিত করেছে, এবং মানুষের জন্য চরম দুর্দশা ডেকে এনেছে। কিন্তু, আমরা যদি আল্লাহ্ ব্যতীত আর কারও পথনির্দেশ না মানি, তবে তিনি আমাদের জন্য এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় বাতলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন:

* فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقَى*

“যে আমার পথনির্দেশ অনুসরণ করবে, সে (দুনিয়ার জীবনে) পথভ্রষ্ট হবে না এবং (পরকালেও) কষ্টে পতিত হবে না” [সূরা ত্বাহা: ১২৩]

 

হিযবুত তাহ্‌রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ-এর মিডিয়া কার্যালয়