অন্তর্বর্তী সরকার নজিরবিহীন ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ করে জনগণের উপর নয়া অর্থনৈতিক স্বৈরশাসন কায়েম করছে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “যে মাক্স (কর বা শুল্ক) আরোপ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না” (মুসনাদে আহমাদ)

بسم الله الرحمن الرحيم

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

অন্তর্বর্তী সরকার নজিরবিহীন ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ করে জনগণের উপর নয়া অর্থনৈতিক স্বৈরশাসন কায়েম করছে

রাসূলুল্লাহ্ বলেছেন, “যে মাক্স (কর বা শুল্ক) আরোপ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না (মুসনাদে আহমাদ)

দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে পিষ্ট, উপযুক্ত আমিষের অভাবে দিন দিন স্বাস্থ্য সংকটের মধ্যে পড়ছে, শিক্ষা-চিকিৎসা খরচ যোগান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। জনগণের এই দুর্দশাকে তোয়াক্কা না করে অন্তর্বর্তী সরকার শতাধিক পণ্যের উপর উচ্চহারে ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ করে জনগণের গলা চিপে ধরেছে। এছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য টিসিবির মাধ্যমে ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে; (ট্রাক সেল বন্ধ, ৪৩ লাখ পরিবারের কার্ড বাতিল : প্রথম আলো, ১০ জানুয়ারী ২০২৫)। সরকারের এসব গণবিরোধী সিদ্ধান্তের কারণ আইএমএফ-এর দেয়া ট্যাক্স-জিডিপি ও ভূর্তুকি প্রত্যাহার নীতি, যা অনুসরণ করতে সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অথচ, আইএমএফ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নব্য-উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান, যার মাধ্যমে তারা বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। আপনারা নিশ্চয়ই প্রত্যক্ষ করেছেন, রিজার্ভ ও জ্বালানী সংকটে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানে যখন স্থবিরতা বিরাজ করছে তখন সরকার অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে করপোরেট কর ও কাঁচামাল আমদানীতে অগ্রিম আয়কর দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দেশের উদীয়মান ইলেকট্রনিক্স শিল্পের জন্য আত্মঘাতী (যুগান্তর, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫)।

দেশের সর্বস্তরের জনগণ যখন অন্তর্বর্তী সরকারের এসব গণবিরোধী সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করছে, তখন প্রধান উপদেষ্টার ননসেন্স প্রেস সচিব বলেছে, আগের সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতার দিকে ফেরানোর লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অথচ তারাই আগের সরকারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকখাতের দুর্নীতির অর্থের ভর্তুকি প্রদান করেছে এবং জনগণের উপর পরোক্ষভাবে কর আরোপ করেছে। সে আরও বলেছে, আইএমএফের পরামর্শ বিশ্বজুড়ে ম্যাক্রো অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে কার্যকর (সংবাদ, ১২ জানুয়ারী ২০২৫) । অথচ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত, আইএমএফ-এর পরামর্শ অনুসরণ করে কোন দেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর নজির নাই, বরং এসব দেশসমূহ চরম পরনির্ভরশীল ও দারিদ্র অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ,  সুদানকে একসময় বলা হতো “রুটির ঝুড়ি”, আর আইএমএফ-এর পরামর্শ অনুসরণ করে সুদান বর্তমানে অন্যতম দুর্ভিক্ষ পীড়িত দেশে পরিণত হয়েছে। আইএমএফ তার ঋণের শর্তের বেড়াজালে আটক করে একটি দেশের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব কেঁড়ে নেয়, এবং বাণিজ্য উদারীকরণ ও বেসরকারীকরণ নীতি বাস্তবায়ন করে সে দেশের অর্থনীতির উপর উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। সবশেষে, তারা ঐ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকেও প্রভাবিত করে। আপনারা জানেন, পতিত হাসিনা সরকার প্রতিবছর ১৬-বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে; এখন যেহেতু সরকার এই অর্থ পাচার বন্ধ হয়েছে বলে দাবী করে তাহলে জনগণ কেন মাত্র ৪.৭-বিলয়ন ডলার ঋণের জন্য আইএমএফ-এর দ্বারস্থ হবে? জনগণ কেন আইএমএফ-এর গণবিরোধী শর্ত মানবে? এছাড়া আমাদের প্রবাসীরা যেখানে বছরে প্রায় ২০-বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করে সেখানে কেন বিদেশী সংস্থার কাছ থেকে আমাদের এই তুচ্ছ ঋণের প্রয়োজন হবে?  জনগণ মনে করছে, পতিত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার যেমন দেশে যুলুম-অত্যাচারের শাসন কায়েম করেছিল, তেমনি বর্তমান এই অন্তর্বর্তী সরকার দেশের অর্থনীতির উপর আইএমএফ-এর আধিপত্য এবং জনগণের উপর অর্থনৈতিক স্বৈরশাসন কায়েম করার পথেই হাঁটছে। তাই, জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের এই হীন এজেন্ডাকে প্রতিহত করতে হবে। আল্লাহ্‌ ﷻ বলেন, তারা যদি তোমাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারে, তাদের আচরণ হবে তোমাদের প্রতি শত্রুর মত, এবং তোমাদের ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে তারা তাদের হস্ত ও রসনা সমূহকে (লোভ) প্রসারিত করবে” (সূরা আলমুমতাহিনা: ০২)

হে দেশবাসী, দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজন আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন। তাই, দেশের অর্থনীতির উপর আইএমএফ-এর হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে এবং উপনিবেশবাদীদের দালাল পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠীকেও প্রত্যাখ্যান করতে হবে। বাণিজ্য উদারীকরণ ও মুক্তবাজার অর্থনীতির মাধ্যমে বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীর কাছে দেশের অর্থনীতির যে জিম্মি দশা তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং দেশীয় শিল্পস্থাপন করে সার্বভৌম ও আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রত্যাখ্যান করে ইসলামী অর্থনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। আপনারা জানেন, ইতিপূর্বে হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্‌ বাংলাদেশ, জাতির উদ্দেশ্যে আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতির রূপরেখা উপস্থাপন করেছে যার মাধ্যমে একটি নেতৃত্বশীল অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত হবে।

হে দেশবাসী, হিযবুত তাহ্রীর-এর নেতৃত্বে নবুয়তের আদলে প্রতিষ্ঠিত আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র ইসলামী অর্থনীতির মডেল বাস্তবায়নের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত, যার মাধ্যমে বর্তমান যুলুমের অবসান হবে। রাসূলুল্লাহ্‌ বলেছেন, “…অতঃপর যুলুমের শাসনের অবসান হবে; তারপর আবারও ফিরে আসবে খিলাফতনবুয়তের আদলে (হাদিসঃ মুসনাদে আহমদ)। সুতরাং, যালিম হাসিনার পতন হলেও যুলুমের শাসন ব্যবস্থা এখনও বিদ্যমান রয়েছে। এই নব্য-উপনিবেশবাদ থেকে মুক্তি পেতে আপনাদেরকে খিলাফত রাষ্ট্রের প্রকল্পকে এগিয়ে নিতে অগ্রগামী হতে হবে। আপনাদের ঐক্যবদ্ধ দাবীর মুখে যেভাবে সামরিক অফিসারগণ আপনাদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে হাসিনাকে বিতাড়িত করেছে। আপনারা যদি খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবীতে ঐক্যবদ্ধ হোন এবং দাবী তুলেন তখনও আমাদের সামরিক বাহিনী আপনাদের পক্ষে অবস্থান নিবে, কারণ তারাও মুসলিম উম্মাহ্‌’র সাহসী সন্তান এবং ইসলামকে ভালোবাসে। তাই হিযবুত তাহ্রীর-এর পক্ষ থেকে আমাদের আহ্বান, আপনারা খিলাফত প্রতিষ্ঠায় হিযবুত তাহ্‌রীর-কে নুসরাহ্‌ প্রদানে সামরিক অফিসারদের নিকট দাবী জানান।

﴿… بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنْ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلاَ يَضِلُّ وَلاَ يَشْقَى

 “…আর যদি তোমাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে কোন হেদায়েত (সঠিক নির্দেশনা) আসে, তাহলে যে আমার হেদায়েত অনুসরণ করবে, সে (পৃথিবীতে) পথভ্রষ্ট হবে না এবং (পরকালে) কষ্টে পতিত হবে না [সূরা ত্বাহাঃ ১২৩]

হিযবুত তাহ্‌রীর / উলাই‘য়াহ্‌ বাংলাদেশ-এর মিডিয়া অফিস